৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়: শীত ঋতুতে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কুয়াশার চাদর গায়ে শীতের আগমনে গাছের সবুজ পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে শুকিয়ে ধূসর হয়। ঘাসের উপর শিশির জমে। ভোরে সূর্য হিম প্রকৃতিতে উষ্ণতার পরশ বোলায়। সূর্যের এই উষ্ণতার মতো আমরাও অন্যের বুকে ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে পারি। শীত প্রকৃতির রূপলাবণ্যে সূর্যের উত্তাপের পরশ থেকে আমরা মানবিকতার শিক্ষা পাই।
শীতের সময় আমাদের দেশের প্রকৃতির ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখি এসে ভিড় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যাদের ভিন্ন ভিন্ন আকার, আকৃতি, রং বিভিন্ন রকমের সুর আর ভঙ্গি দেখে আমাদের মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তাই এদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো, এদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের।
শীতে খেজুরের রস, পিঠাপুলি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। শীতের সময় পাতা-ঝরা গাছগুলোর ডালপালা দেখলে শিল্পীর আঁকা আঁকাবাঁকা হাজার রেখার মতো মনে হয়। কুয়াশায় ঢাকা চাদরের সামনে পাতা ছাড়া গাছকে ঘিরে তৈরি হয় আলো-আঁধারের গল্প। আমরা শীতের আগে সবুজ পাতা আচ্ছাদিত গাছের সঙ্গে শীতে পাতা-ঝরা গাছের পার্থক্য অনুধাবন করতে পারি।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
কাজ-১: আমরা পূর্বের গাছটির শীতের সময়ে কী পরিবর্তন হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারি এবং তা বন্ধুখাতায় লিখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-৮]
আমরা পূর্বের গাছটির শীতের সময়ের অবস্থার অনেক পরিবর্তন দেখেছি এবং পরিবর্তনগুলো বন্ধুখাতায় লিখেছি। নমুনা হিসেবে আমরা একটি মেহগনি গাছ নির্বাচন করেছি। গাছটির বিভিন্ন পরিবর্তন নিচে ছকে দেখানো হলো-
১.
গাছটির পূর্বের অবস্থা: পাতাগুলো সবুজ রঙের ছিলে।
গাছটির শীতকালীন অবস্থা: পাতাগুলো হলুদ রং ধারণ করেছে।
২.
গাছটির পূর্বের অবস্থা: পাতা দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল।
গাছটির শীতকালীন অবস্থা: অধিকাংশ পাতা ঝরে পড়েছে।
৩.
গাছটির পূর্বের অবস্থা: ডালগুলো পাতা দিয়ে ঢাকা ছিল।
গাছটির শীতকালীন অবস্থা: ডাল থেকে পাতা ঝরায় ডালগুলো দেখতে এখন কালো কালো রেখার মতো মনে হয়।
৪.
গাছটির পূর্বের অবস্থা: সবুজ পাতায় পূর্ণ থাকায় গাছটিকে জীবন্ত দেখাচ্ছিল।
গাছটির শীতকালীন অবস্থা: অধিকাংশ পাতা ঝরে পড়ায় গাছটিকে মৃত বলে মনে হয় ।
কাজ-২: শীত এলে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন ঘটে তা আমরা বন্ধুখাতায় লিখে শিক্ষককে দেখাতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-৮]
শীত এলে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন ঘটে তা আমরা বন্ধুখাতায় লিখে শিক্ষককে দেখিয়েছি। নিচে তা দেওয়া হলো-
১. শীতের সময় গাছের সবুজ পাতা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে।
২. শীতের সময় চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে।
৩. শীতের সকালে ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু পড়ে থাকে।
৪. শীতের সকালে সূর্যের আলো ও তাপ আমাদেরকে সজীব করে।
৫. শীতের সময় বিদেশ থেকে অসংখ্য পাখি আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসে ভিড় করে।
৬. দূরের অতিথি পাখিদের ভিন্ন ভিন্ন আকার-আকৃতি, রং ও সুরের মাধ্যমে আমাদের হৃদয় জুড়ায়।
৭. শীত প্রকৃতি আমাদেরকে অপরের প্রতি সহনশীল হতে শেখায়।
৮. শীতের পিঠা-পুলি, খেজুরের রস খাবারের পছন্দ তালিকায় থাকে।
৯. শীতে শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটলে ছন্দময় শব্দ তৈরি হয়।
১০. শীতে পাতাহীন ডালগুলোকে আঁকাবাঁকা হাজারো রেখা মনে হয়।
১১. শীতের রাতে চাঁদের উকিতে আলো-অন্ধকারের সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়।
কাজ-৩: আমরা আমাদের এলাকায় শীতকালে যে প্রাকৃতিক অবস্থা সৃষ্টি হয় তার পরিচয় বন্ধুখাতায় লিখতে পারি।
বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন ঋতুবৈচিত্র্য দেখা যায় না। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ছয়টি ঋতুর আগমন ঘটে। শীত ঋতু সেগুলোর মধ্যে একটি। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। আমাদের এলাকাটি গ্রামপ্রধান। শীতকালে আমাদের এলাকায় অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। আমাদের এলাকায় শীত তার অনবদ্য সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে আসে। ঘাসে ঘাসে পড়ে থাকে মুক্তার মতো উজ্জ্বল শিশিরবিন্দু।
কুয়াশার ধূসর আস্তরণে ঢেকে থাকে সমস্ত এলাকা। পথ-ঘাট, গাছপালা, ঘরের চালা শিশিরের জলে ভিজে থাকে। এ কারণে চারদিকে এক অসাধারণ শুভ্রতা পবিত্রতা বিরাজ করে। মাঠে মাঠে ধান কাটা হয়ে গেলে চারদিক হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে থাকে। এ সময় বাড়ির চারপাশ ভরে ওঠে শীতকালীন সবুজ শাকসবজি আর ফলে। পাতাশূন্য হয়ে পড়ে গাছপালা। তবে শীতকালীন ফুল যেমন- শিউলি, গাঁদা, ডালিয়া, এলাকার সব বাড়ির উঠানে শোভা পায়। পাখির কলকাকলিতে মানুষ ঘুম থেকে জাগে। শীতকালে একদিকে যেমন প্রকৃতিতে ভর করে রিক্ততা, বিষণ্ণতা, তেমনই অন্যদিকে থাকে কোমলতা, নির্মলতা।
টীকা লিখ: শীতের সকাল উপভোগ
শীতের আগমনের পূর্বেই হৃদয়ে আলাদা ভালো লাগা কাজ করছিল। এবারের শীতটি খুব ভালোভাবেই উপভোগ করেছি। গাছগুলোকে পাতায় পরিপূর্ণ দেখেছিলাম, শীতে আলাদা সুন্দর আরেকটি রূপে দেখলাম। কুয়াশার মাঝে সূর্যের আলো, দূর আকাশে পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি আমার মন কেড়েছে। এবারের শীতে কক্সবাজার ও বান্দরবানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আশেপাশেও অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। খেজুরগাছ ও অতিথি পাখিদের ছবি ধারণ করেছি।
শুকনো পাতার মচমচ আওয়াজ ভিডিও ধারণ করে রেখেছি। ডাল ও পাতা দিয়ে অনেক নকশা এঁকেছি এবং খেজুরের রস দিয়ে নিজে পিঠা ও পায়েস রান্না করেছি। খুব ভালোভাবেই পুরো সময় উপভোগ করেছি। শীতের দিনগুলো ছিল দারুণ উপভোগ্য।
টীকা লিখ: শীতকালে ভ্রমণের সুবিধা-অসুবিধা
শীতকালে ভ্রমণের সুবিধা:
১. মানুষ অধিক ভ্রমণেও ক্লান্ত হয় না।
২. নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
৩. খাবার নষ্ট হয় না।
শীতকালে ভ্রমণের অসুবিধা:
১. মানুষ বিভিন্ন রকম ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
২. অধিক কুয়াশার কারণে ভ্রমণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
৩. দিন ছোটো হওয়ায় বেশি সময় ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পাওয়া যায় না।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায় এক কথায় উত্তর
প্রশ্ন ১। “শীতের হাওয়ার লাগল নাচন”- এ গানটি কে লিখেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২। শীত এলে গাছের সবুজ পাতা কেমন হয়?
উত্তর: হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে।
প্রশ্ন ৩। শীতে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে শুকিয়ে কেমন হয়?
উত্তর: ধূসর রঙের হয়।
প্রশ্ন ৪। কুয়াশার চাদরে চারদিক ঢাকা পড়ে কখন?
উত্তর: শীতের সময়।
প্রশ্ন ৫। শীতে ভোরের প্রথম সূর্য কী ছড়ায়?
উত্তর: আলো।
প্রশ্ন ৬। শীতে প্রকৃতিকে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দেয় কে?
উত্তর: সূর্য।
প্রশ্ন ৭। সূর্যের মতো আমরা সবার মাঝে কী ছড়িয়ে দিতে পারি?
উত্তর: ভালোবাসা।
প্রশ্ন ৮। শীতের সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে কোন পাখি ভিড় করে?
উত্তর: অতিথি পাখি।
প্রশ্ন ৯। শীতের সময়ে কীসের উপর শিশির পড়ে থাকে?
উত্তর: ঘাসের উপর।
প্রশ্ন ১০। শীতে অতিথি পাখিদের সুর আর ভঙ্গি দেখে আমাদের কী জুড়িয়ে যায়?
উত্তর: মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন ১১। কোন সময় গাছের পাতা ঝরে যায়?
উত্তর: শীতের সময়।
প্রশ্ন ১২। শীত মানেই কী?
উত্তর: পাতা ঝরার গান।
প্রশ্ন ১৩। শীতের সময় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে কী আসে?
উত্তর: শীতের পাখি।
প্রশ্ন ১৪। শুকনো পাতার উপর দিয়ে হাঁটলে কী তৈরি হয়?
উত্তর: ছন্দময় শব্দ।
প্রশ্ন ১৫। শীতে পাতাহীন গাছের ডালপালাগুলো কীসের মতো মনে হয়?
উত্তর: আঁকাবাঁকা রেখার মতো।
আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায় ” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।