৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়: চৈত্রের শেষ দিন পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বৈশাখের প্রথম দিন আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। এ দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে নিজেদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব পালন করে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে হালখাতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ দিন শহরে ও গ্রামে মেলা বসে।
মেলায় মাটির পুতুল, শখের হাঁড়ি, পাটের শিকা, নানা রকম খেলনা, শীতলপাটি, বিভিন্ন লোকশিল্প সামগ্রী, মিষ্টি, সন্দেশ, মুড়ি- -মুড়কিসহ নানা রকম খাবার পাওয়া যায়। নববর্ষকে বরণ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালা, সার্কাস, নাগরদোলা, বাউল গান, – লোকনাটক, পুতুলনাচ প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। আমাদের সংস্কৃতির এসব বিষয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি। কারণ এই লোকশিষ্টই হলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির শিকড়।
বর্ষবরণ আমাদেরকে নিজের দেশ ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যে এনে নতুন আনন্দে জেগে উঠতে শেখায়। ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়েই শুরু হয় প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে চারদিক যখন ক্লান্ত হিয়ে পড়ে, ঠিক তখন কালবৈশাখীর তীব্র ঝড়ো হাওয়া প্রকৃতিতে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয়। প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়
কাজ-১: আমাদের স্কুলে ‘পয়লা বৈশাখ’ অনুষ্ঠান করার জন্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করব তা বন্ধুখাতায় লিখে শ্রেণিশিক্ষকের নিকট জমা দিতে পারি।
আমাদের স্কুলে ‘পয়লা বৈশাখ’ অনুষ্ঠান করার জন্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি তা বন্ধুখাতায় নিম্নোক্তভাবে লিখে শ্রেণিশিক্ষকের নিকট জমা দিয়েছি।
পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ উৎসব। নববর্ষ সব দেশের, সব জাতির আনন্দ উৎসবের দিন, সব মানুষের কল্যাণ কামনার দিন। বিশ্বের সব মানুষের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা নববর্ষ- উৎসব উদযাপন করি। এ দিনে একে অন্যকে বলি “শুভ নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব।
প্রতিবছরই এ উৎসব বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে উঠছে। আমাদের স্কুলেও প্রতিবছর ‘পয়লা বৈশাখ’ উৎসব পালন করা হয়। এবারের পয়লা বৈশাখে আমরা অন্যরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এবার আমরা বাঙালির চিরকালীন সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তুলে ধরব বলে ঠিক করেছি। এরই মধ্যে আমরা অনুষ্ঠান পরিকল্পনার একটি খসড়া করেছি। খসড়াটি নিম্নরূপ-
১. বাংলা নববর্ষ উদযাপন র্যালি।
২. ভোরে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই নিজ নিজ পোশাক শাড়ি, পাজামা-পাঞ্জাবি পরব; নববর্ষের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার, মুখোশ লাগিয়ে র্যালি করব।
৩. র্যলিতে ঢোল, করতাল ইত্যাদি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র থাকবে।
৪. নববর্ষের আগমনী গানে র্যালির চারপাশের লোকজনকে নববর্ষের আনন্দবার্তা পৌঁছে দেব।
৫. র্যালি স্কুল থেকে শুরু হবে, আবার স্কুলে এসেই শেষ হবে। র্যালি শেষে আমরা সবাই পান্তা-ইলিশ খাব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন:
১. নববর্ষকে কেন্দ্র করে কবিতা আবৃত্তি, নাচ-গান, বাঙালির এবং নাটিকা ইত্যাদি থাকবে।
২. নববর্ষের নাটকে সেকালের জমিদার, মহাজনদের পুণ্যাহ, হালখাতা ইত্যাদি তুলে ধরা হবে।
স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন:
১. স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন করা হবে।
২. মেলার এক পাশে ঘোষণা মঞ্চ থাকবে।
৩. মেলায় বাঙালি খাবার, কুটিরশিল্প তথা বাঁশ-বেতের জিনিস, মাটির জিনিস, সুই-সুতার কাজ করা বিভিন্ন জিনিস প্রদর্শনের ও কেনাকাটার ব্যবস্থা থাকবে।
৪. মেলায় বাঙালি খাবার রান্নার প্রতিযোগিতা থাকবে তাতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
৫. অনুষ্ঠান মধ্যে রাতের বেলা লোকগানের আয়োজন করা হবে।
৬. মেলায় নাগরদোলা, পুতুলনাচ, লাঠিখেলা প্রভৃতি থাকবে। আমরা এসব অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনায় যথার্থ নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় লোকজন এবং প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ করব।
নব আনন্দে জাগো সমাধান
কাজ-২: আমরা আমাদের এলাকার বৈশাখী মেলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারি এবং তা বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি।
আমরা আমাদের এলাকার বৈশাখী মেলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছি এবং তা নিম্নোক্তভাবে বন্ধুখাতায় লিখে রেখেছি। মেলায় আমরা যেসব জিনিস প্রত্যক্ষ করলাম তা নিচে দেওয়া হলো-
১. মেলায় ঢোকার পথেই বৈশাখী মেলা/১৪৩০ সুন্দর করে সাজানো গেট। গেটে নানা রকম আলপনা, ফুল ও পাখির ছবি আঁকা।
২. মেলায় ভেতরে শীতলপাটির দুটি দোকান রয়েছে।
৩. রাস্তার পাশে তিনটি তাঁতের কাপড়ের দোকান রয়েছে।
৪. কাচের চুড়ি, মাটির চুড়ি, মাটির দুলের দোকান ৭টি। সেখানে কয়েকজন নারী ও পুরুষ বিক্রেতা আছেন।
৫. এক সারিতে কয়েকটি মিষ্টির দোকান। সেখানে কী কী পাওয়া যায় তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তুলে ধরা হয়েছে। যেমন- মুক্তাগাছার মণ্ডা’, ‘পোড়াবাড়ির চমচম’, ‘নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি’, ‘বগুড়ার মিষ্টি দই’, ‘নাটোরের কাচাগোল্লা’, ‘কুমিল্লার রসমালাই’ ইত্যাদি।
৬. মেলায় যেখানে মোটরসাইকেল খেলা, নাগরদোলা, পুতুলনাচ হচ্ছে সেখানে লোকের ভিড় সবচেয়ে বেশি।
টীকা লিখ – বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান
চৈত্র মাসের শেষ দিন বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান হয়। বর্ষবিদায় উপলক্ষে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। খাবারের মধ্য তেতো স্বাদের খাবার অন্যতম। নোয়াখালী অঞ্চলে চৈত্র সংক্রান্তির দিন বিভিন্ন বনজ ঔষধি লতাপতা এবং শাকসবজি দিয়ে এক ধরনের তেতো স্বাদের খাবার তৈরি হয়। চৈত্র সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষণীয় খাবার হলো টক স্বাদের বিভিন্ন শরবত। সকালে খাওয়া হয় হরেক রকমের ফল। এটাকে বলা হয় ফলার বা ফলাহার।
টীকা লিখ – বর্ষবরণ
পহেলা বৈশাখ বা বাংলা বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উদযাপিত হয়। বর্ষবরণ উৎসবে নানা বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট প্রতিবছর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বর্ণিল আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এটি নবর্ষের অন্যতম বড় আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখের মূল খাবারের মধ্যে পান্তা-ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে।
টীকা লিখ – হালখাতা
বাংলা বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা পুরনো হিসাব মিটিয়ে হিসাবের খাতা হাল নাগাত করার প্রক্রিয়াকে হালখাতা বলে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের হিসাব মিটানোর জন্য কিছুটা ছাড় দিয়ে থাকেন। ফলে তারা ঋণ পরিশোধ করতে আগ্রহী হয়। ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের এই দিনে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা করে থাকেন।
টীকা লিখ – সংস্কৃতি
মানুষ আনন্দ কল্যাণ ও সামঞ্জস্য বিধানের জন্য যা করে তাই মানুষের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। যেকোনো সমাজে প্রচলিত সামগ্রিক সামাজিক আচরণ ও কার্যকলাপের মার্জিত রূপই সংস্কৃতি। মানুষ যা অনুশীলন বা চর্চা করে, তাই মানুষের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের যাবতীয় সৃষ্টিকে সংস্কৃতি বলে। এগুলো বংশপরম্পরায় বা উত্তরাধিকারসূত্রে মানব সমাজে বিদ্যমান থাকে। যেমন- বাঙালি সংস্কৃতি, ভারতীয় সংস্কৃতি, মুসলিম সংস্কৃতি, হিন্দু সংস্কৃতি ইত্যাদি।
টীকা লিখ – চৈত্র সংক্রান্তি
বাংলা বছরের শেষ দিনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিকে বাঙালিরা চৈত্র সংক্রান্তি হিসেবে পালন করে। ধর্মীয় বিশ্বাস, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোক-লোকায়ত উৎসবের ধ্বনি পাওয়া যায় এই দিনটি ঘিরে। শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যজনক মনে করা হয়।
দিনটি ঘিরে থাকে নানা অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন হয়। যেমন- চৌদ্দ রকম শাক দিয়ে দুপুরের আহার বা শাকান্ন উৎসব, গমের ছাতু, দই ও পাকা বেল সহযোগে শরবত পান, তালতলার শিরনি, লোকজ নামাজ, চড়ক পূজা ও নীল পূজা, শিবের গাজন ও গম্ভীরা পূজা ইত্যাদি। এছাড়া এই দিনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিজু উৎসব, বৈসু উৎসব ও সাংগ্রাই উৎসবও পালিত হয় মহা ধুমধামে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মানুষ চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠে।
টীকা লিখ – পুতুল নাচ
পুতুল নাচ কলাটিতে একজন শিল্পী (যাকে পুতুল নাচশিল্পী বলে) এখ বা একাধিক জড় পুতুলকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি দৃষ্টিবিভ্রম সৃষ্টি করেন যাতে মনে হয় যে পুতুল (গুলি) জীবন্ত। পুতুলগুলো প্রায়শই মানুষ, প্রাণী বা কিংবদন্তির কোনও জীবের আকৃতি ধারণ করে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায় এক কথায় উত্তর
প্রশ্ন ১। বছরের শেষ দিন যে অনুষ্ঠান হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: চৈত্র সংক্রান্তি বা বর্ষবিদায়।
প্রশ্ন ২। আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাই কবে?
উত্তর: বৈশাখের প্রথম দিন।
প্রশ্ন ৩। আমাদের প্রাণের উৎসব কী?
উত্তর: বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ।
প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশ নামের এই বাগানে কী রয়েছে?
উত্তর: বিভিন্ন জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের মানুষ।
প্রশ্ন ৫। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে শহরে ও গ্রামে কী হয়?
উত্তর: বৈশাখী মেলা।
প্রশ্ন ৬। কারা বিভিন্ন ধরনের লোকশিল্প সামগ্রী তৈরি করেন?
উত্তর: লোকশিল্পীরা।
প্রশ্ন ৭। মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, সন্দেশ পাওয়া যায় কোন মেলায়?
উত্তর: বৈশাখী মেলায়।
প্রশ্ন ৮। আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির শিকড় বলা হয় কোন শিল্পকে?
উত্তর: লোকশিল্পকে।
প্রশ্ন ৯। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর নাম কী?
উত্তর: গ্রীষ্ম।
প্রশ্ন ১০। কোন দুই মাস নিয়ে গ্রীষ্মকাল?
উত্তর: বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ।
প্রশ্ন ১১। পাটের শিকা, শীতলপাটি কী ধরনের শিল্প?
উত্তর: লোকশিল্প।
প্রশ্ন ১২। সার্কাস, বাউলগান, লোকনাটক, পুতুলনাচ, আমাদের সংস্কৃতির কেমন অংশ?
উত্তর: অমূল্য।
প্রশ্ন ১৩। মিষ্টি, সন্দেশ, মোয়া, মুড়ি প্রভৃতি খাবার বৈশাখী মেলার আয়োজনকে কী করে?
উত্তর: আনন্দময় করে তোলে।
আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আরও দেখুন: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়
আরও দেখুন: স্বাধীনতা তুমি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়
আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক –পেইজ –লিংকডিন এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।