৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়: শীতের শেষে পাতা-ঝরা গাছে গাছে নতুন সবুজ পাতা আর ফুলের বাহার নিয়ে আসে বসন্ত। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বসন্ত প্রকৃতি, ফাগুনবেলা। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বা ৮ই ফাল্গুনেও প্রকৃতি সেজেছিল শিমুল-পলাশের রঙে রঙিন হয়ে। পলাশের রঙে আগুনঝরা এই দিনে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য ঢাকার রাজপথে নামেন একদল তরুণ।
পাকিস্তানি ঘাতকদের বন্দুকের গুলিতে ঝরে যায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক তাজা প্রাণ। তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি পায় বাংলা ভাষার মর্যাদা। তাই এ ভাষাকে বলা হয়েছে পলাশের রঙে রঙিন ভাষা। আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা, আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম বাহন। এই ভাষার জন্য আত্মদানকারী শহিদদের সম্মানে তৈরি হয়েছে শহিদ মিনার। এ দিনটিকে প্রতিবছর শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
এ দেশের তরুণদের মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে জাতিসংঘ ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের, সারা বিশ্বের সকল ভাষার মানুষের জন্য সম্মানের। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি গাইতে গাইতে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে প্রতিবছর শহিদদের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। পলাশের রঙে রঙিন ভাষার চেতনায় আমরা প্রাণিত হই।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়
কাজ-১: আমরা শীতের সময় দেখা গাছগুলো বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে গাছের পরিবর্তনসমূহ বন্ধুখাতায় লিখতে পারি। (পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-১৪)
আমরা শীতের সময় দেখা গাছগুলো বর্তমান অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে গাছের পরিবর্তনসমূহ বন্ধুখাতায় লিখেছি। আমি বন্ধুখাতায় গাছটির যেসব পরিবর্তন লিখলাম সেগুলো হলো-
১. গাছগুলো পূর্বে পাতাবিহীন ছিল বর্তমানে নতুন পাতা দেখা দিয়েছে।
২. গাছ থেকে পাতা ঝরলেও বসন্তে কোনো পাতা ঝরছে না।
৩. শীতকালে পাতাগুলো হলুদ রঙের হয়েছিল আর বসন্তে পাতাগুলো গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে।
৪. শীতকালে গাছের ডালগুলো পাতাবিহীন হয়ে কালো কালো রেখার মতো মনে হতো, বর্তমানে বসন্তে ডালগুলো পাতা দিয়ে ঢেকে গিয়েছে।
৫. শীতকালে গাছগুলোকে মৃত মনে হয়েছিল, বর্তমানে বসন্তকালে গাছটিকে জীবন্ত মনে হচ্ছে।
পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান
কাজ-২: আমরা কয়েকজন ভাষাশহিদের নাম বন্ধুখাতায় লিখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-১৪]
আমরা কয়েকজন ভাষাশহিদের নাম বন্ধুখাতায় লিখেছি এবং শহিদ মিনারের ছবি এঁকেছি নিচে তা দেওয়া হলো-
১. ভাষাশহিদ আবদুল জব্বার
২. ভাষাশহিদ আবদুস সালাম
৩. ভাষাশহিদ আবুল বরকত
৪. ভাষাশহিদ রফিকউদ্দিন আহমদ।
কাজ-৩ : আমরা ভাষাশহিদদের সম্পর্কে বন্ধুখাতায় আমাদের অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-১৪]
আমরা ভাষাশহিদদের সম্পর্কে বন্ধুখাতায় আমাদের অভিজ্ঞতা নিম্নোক্তভাবে লিখে রাখলাম। ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ। ১৯৫২ সাল। ফাল্গুন মাস। বসন্তকাল। কোনো কোনো গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ছে। কিছু কিছু গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। পলাশ ফুল ফুটেছে। বাগানে গাঁদা ও ডালিয়া ফুটে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। চারদিকে কেমন থমথমে ভাব। পুলিশ মিছিল করতে নিষেধ করেছে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ছাত্রদের। পাকিস্তান সরকার সেই দাবি মানছে না। তারা চায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে। বাঙালির মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে। তাই পুলিশ চারজনের বেশি লোককে জড়ো হতে দিচ্ছে না। ছাত্র ও জনতা তা মানবে না। তারা মিছিল করবে। শোনা গেল, পুলিশ মিছিলে গুলি করতে পারে। টগবগে তরুণরা বেপরোয়া। তারা জীবন দেবে তবু মায়ের ভাষার দাবি ছাড়বে না। মিছিল বের হলো। পুলিশ গুলি করল। গুলিতে শহিদ হলেন অনেকে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এরকম অনেক নাম । তাঁরা আমাদের ভাষাশহিদ।
পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান
কাজ-৪: আমরা ভাষা আন্দোলনভিত্তিক কয়েকটি গ্রন্থের তালিকা তৈরি করে বন্ধুখাতায় লিখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-১৫]
আমরা ভাষা আন্দোলনভিত্তিক কয়েকটি গ্রন্থের তালিকা তৈরি করে নিম্নোক্তভাবে বন্ধুখাতায় লিখেছি-
১. আরেক ফাল্গুন (উপন্যাস) – জহির রায়হান
২. কবর (নাটক) – মুনীর চৌধুরী
৩. একুশে ফেব্রুয়ারী (সম্পাদনা গ্রন্থ) – হাসান হাফিজুর রহমান
8. জীবন থেকে নেওয়া (চলচ্চিত্র) – জহির রায়হান।
কাজ-৫: ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে আমাদের কী করা উচিত? এ সম্পর্কে বন্ধুখাতায় কয়েকটি বাক্য লিখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-১৫]
ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে আমাদের কী করা উচিত সেই সম্পর্কে বন্ধুখাতায় কয়েকটি বাক্য লিখেছি। ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে আমাদের যা যা করা উচিত-
১. ভাষাশহিদদের অবদান ও আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা।
২. মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা অক্ষুণ্ণ রাখা।
৩. মাতৃভাষার মাধ্যমে স্বদেশের সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করা।
৪. মাতৃভাষার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৫. মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হওয়া।
৬. শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।
৭. ভাষাশহিদদের অবদানের গুরুত্ব অনুধাবন করা।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সম্পর্কে যা জানো তা লেখ।
আবদুল গাফফার চৌধুরী (১৯৩৪ ২০২২) একজন বাংলাদেশি গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’-এর রচয়িতা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয়বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। তিনি তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
আলতাফ মাহমুদ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ।
আলতাফ মাহমুদ (১৯৩৩-১৯৭১) সংগীতশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। বরিশাল শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম এ.এন.এম আলতাফ আলী। শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি আলতাফ মাহমুদের অনুরাগ প্রকাশ পায়। তাঁর কণ্ঠ ছিল দরদ আর আমেজপূর্ণ। বরিশাল জেলা স্কুলে অধ্যয়নকালেই তাঁর সংগীতচর্চা শুরু হয়। ১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় এসে ‘ধূমকেতু শিল্পী সংঘ’-এ যোগদান করেন। পরে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি তিনি সুর করেন।
আবদুল লতিফ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ।
আবদুল লতিফ (১৯২৪-২০০৬) সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তিনি বরিশালের রায়পাশা গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল লতিফ কলকাতা থেকে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আসেন। এখানে বিখ্যাত গায়ক ও সংগীত পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আবদুল লতিফের গানগুলোতে পূর্ব বাংলার অধিকারবঞ্চিত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটেছে। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সময়ে লেখা তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত গান ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায় এক কথায় উত্তর
প্রশ্ন ১। ভাষা লিখে রাখতে মানুষ কী আবিষ্কার করেছে?
উত্তর: বর্ণমালা।
প্রশ্ন ২। সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহন কী?
উত্তর: ভাষা।
প্রশ্ন ৩। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বাহন কী?
উত্তর: বাংলা ভাষা।
প্রশ্ন ৪। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ….. গানটির লেখক কে?
উত্তর: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
প্রশ্ন ৫। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…’ গানটির সুরকার কে?
উত্তর: আলতাফ মাহমুদ।
প্রশ্ন ৬। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো …’ গানের প্রথম সুরকার কে?
উত্তর: আবদুল লতিফ।
প্রশ্ন ৭। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা কত তারিখ?
উত্তর: ৮ই ফাল্গুন, ১৩৫৮।
প্রশ্ন ৮। ১৯৫২ সালে একদল তরুণ ঢাকার রাজপথে মিছিলে নেমেছিলেন কেন?
উত্তর: বাংলাকে রক্ষা করতে।
প্রশ্ন ৯। পাকিস্তানি খাতকের বন্দুকের গুলিতে কী হয়?
উত্তর: অনেক তাজা প্রাণ করে যায়।
প্রশ্ন ১০। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার কীসের জন্য জীবন দিয়েছেন?
উত্তর: মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে।
প্রশ্ন ১১। বাংলা ভাষার মান বাঁচাত্বে আত্মদানকারীরা কী ধরনের শহিদ?
উত্তর: ভাষাশহিদ।
প্রশ্ন ১২। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন সারা বিশ্বে কী হিসেবে পালন করা হয়?
উত্তর: আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস।
প্রশ্ন ১৩। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেন কে?
উত্তর: জাতিসংঘ।
আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আশাকরি “পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।