শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। বাঙালি সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষী লোক বেশি হলেও শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার জনগণ ভাষার দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করে, যা ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিল্পী মুর্তজা বশির, ইমদাদ হোসেনসহ চারুকলার ছাত্ররা বিভিন্ন আলপনা এবং নকশা সংবলিত পোস্টার ও ছাপচিত্র আঁকেন।
শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
ভাষা
ভাষা হলো সংস্কৃতির অন্যতম অলে। বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা। ভাষা সাধারণত দুই প্রকার। যথা: ১. মৌখিক ভাষা; ২. লিখিত ভাষা। মৌখিক ভাষায় দুটি রীতি লক্ষ করা যায়। একটি প্রমিত রীতি (Standard) অপরটি আঞ্চলিক রীতি (Regional)
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. সংস্কৃতির অন্যতম অজ্ঞা কী?
উত্তর: ভাষা।
প্রশ্ন-২. ভাষা সাধারণত কয় প্রকার?
উত্তর: দুই প্রকার।
প্রশ্ন-৩. মৌখিক ভাষায় কয়টি রীতি লক্ষ করা যায়?
উত্তর: দুইটি।
প্রশ্ন-৪. মৌখিক ভাষায় প্রচলিত দুটি রীতির নাম লেখো।
উত্তর: প্রমিত রীতি এবং আঞ্চলিক রীতি।
মায়ের মুখের মধুর ভাষা
আঞ্চলিক ভাষা
অঞ্চলভেদে ভাষার প্রচলিত কথ্যরূপকে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। ভৌগোলিক ব্যবধান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক গঠন, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি কারণে এক এলাকার ভাষা থেকে অন্য এলাকার ভাষায় পার্থক্য সৃষ্টি হয়। অঞ্চলভেদে আমাদের ভাষায় শব্দের রূপে ও কথা বলার ধরনে পার্থক্য দেখা যায়। আমরা বইয়ের ভাষার বাইরেও একটু আধটু নিজ জেলার ভাষায় কথা বলি।
বেশিরভাগ মানুষই সর্বপ্রথম এই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। কারণ এটিই আমাদের মায়ের মুখে শোনা প্রথম বুলি । আমাদের প্রথম ভাবের আদান-প্রদান এই ভাষাতেই হয়। তাই আঞ্চলিক ভাষা আমাদের কাছে এতো মধুর। আঞ্চলিক ভাষা সাধারণত মৌখিক ভাষা, তবে তার লিখিত রূপও পাওয়া যায়।
লিপি বা ফন্ট (Font)
লিপি বা ফন্ট হচ্ছে বর্ণ বা অক্ষর, যতিচিহ্ন, সংখ্যা, গাণিতিক চিহ্ন ইত্যাদি মিলিয়ে সম্পূর্ণ লিপিমালা। অর্থাৎ কোনো অক্ষরের নির্দিষ্ট আকার, চাপ ও স্টাইলকে ফন্ট (font) বলে। আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা বা সামঞ্জস্যপূর্ণতার ভিত্তিতে বিভিন্ন লিপিমালা বা ফন্ট নানা নামে পরিচিত।
আমাদের বাংলা বর্ণমালা লেখার জন্য রয়েছে নানা রকমের বাংলা লিপি বা ফন্ট, আবার তাদেরও রয়েছে হরেক রকমের নাম। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল আন্দোলনে বিভিন্ন পোস্টার, দেয়ালিকা লিখতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে হরেক রকমের বাংলা লিপি বা font.
শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. আঞ্চলিক ভাষার অপর নাম কী?
উত্তর: উপভাষা।
প্রশ্ন-২. আমাদের মায়ের মুখে শোনা প্রথম বুলি সাধারণত ভাষার কোন রূপের অন্তর্গত?
উত্তর: আঞ্চলিক ভাষা।
প্রশ্ন-৩. আমরা বইয়ের ভাষার বাইরে মাঝে মাঝে যে ভাষায় কথা বলি তাকে কী বলে?
উত্তর: আঞ্চলিক ভাষার।
প্রশ্ন-৪. লিপির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: Font
কবিগান
বাংলার লোকসংস্কৃতির তথা লোকসংগীতের একটি জনপ্রিয় ধারা হল কবিগান। যারা কবিগান করেন তারা হন একাধারে কবি ও গায়ক। তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে সেটা গেয়ে প্রতিপক্ষের জবাব দেয়াটা কবিগানের প্রধান ধরন।
রমেশ শীল
রমেশ শীল ছিলেন অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিয়াল। তিনি ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার গোমদন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যগতভাবে কবিগানের প্রধান বিষয় পৌরাণিক হলেও রমেশ শীল তাঁর কবিগানে সমকালের নানা ঘটনা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে গানের মাধ্যমে তুলে ধরতেন।
কবিগানের ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসে এটি ছিল একটি মৌলিক পরিবর্তন। আগে কবিগান কেবল চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হলেও কবিয়াল রমেশ শীল একে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করেন। তাঁর আরেকটি বড় অবদান হল মাইজভাণ্ডারী গান রচনা। তাঁর রচিত মাইজভান্ডারী গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ। তিনি ১৯৬৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. কোনটি বাংলার লোকসংস্কৃতি তথা লোক সংগীতের একটি জনপ্রিয় ধারা?
উত্তর: কবিগান।
প্রশ্ন-২. কারা একাধারে কবি ও গায়ক হন?
উত্তর: যারা কবিগান করেন।
প্রশ্ন-৩. কোনটি কবি গানের প্রধান ধরন?
উত্তর: তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে সেটা গেয়ে প্রতিপক্ষের জবাব দেওয়া।
প্রশ্ন-৪. অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিয়াল ছিলেন কে?
উত্তর: রমেশ শীল।
প্রশ্ন-৫. রমেশ শীল কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: চট্টগ্রাম জেলার গোমদন্ডী গ্রামে।
প্রশ্ন-৬. কে কবিগানের ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন?
উত্তর: রমেশ শীল।
প্রশ্ন-৭. রমেশ শীলের মাইজভান্ডারী গানের সংখ্যা কত?
উত্তর: প্রায় সাড়ে তিনশ।
শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
কাজ-৩: বাছাইকৃত আঞ্চলিক গানটি নাটিকা হিসেবে উপস্থাপন করা।
কাজের উদ্দেশ্য: নিজের মতো করে আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষার সাংস্কৃতিক উপাদানকে প্রকাশ করা।
কাজের ধরন: দলীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: পোশাক, সাজ-সজ্জা ও মঞ্চ: বেদেদের জন্য গামছা, লুঙ্গি, কাপড়, জমিদার চরিত্রের জন্য সুন্দর জাঁকজমক পোশাক। মঞ্চ তৈরি করার সময় এক পাশে বেদে এলাকা ও অন্য পাশে জমিদার বাড়ি বানাবো।
নমুনা সমাধান: মহুয়া সুন্দরী নাটিকার চরিত্রগুলো হচ্ছে – হুমরা বেদে, বেদে দল, মহুয়া সুন্দরী, জমিদারের ছেলে দেওয়ান নদের চাঁদ। প্রথমে বেদে দলের সর্দার হুমরা বেদে তার দল নিয়ে জমিদার এলাকায় অবস্থান করবে। হুমরা বেদের মেয়ে মহুয়া সুন্দরী ঐ এলাকায় সাপের খেলা দেখানোর জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরবে। তখন জমিদারের ছেলে নদের চাঁদের সঙ্গে তার দেখা হবে। এরপর উপরের গানটি দুজনে মিলে পরিবেশন করবে। গানের এক পর্যায়ে হুমরা বেদে এসে নদের চাঁদকে অনুরোধ করবে মহুয়া সুন্দরীর সাথে কথা না বলার জন্য। নদের চাঁদ তখন মন খারাপ করে জমিদার বাড়ির দিকে চলে যাবে।
শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
কাজ-৪: কবি রমেশ শীলের শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানা।
কাজের উদ্দেশ্য: আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষার গান বা কবিগানের ক্ষেত্রে রমেশ শীলের অবদান চিহ্নিত করা।
কাজের ধরন: একক।
নমুনা সমাধান: অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিয়াল রমেশ শীলের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার গোমদণ্ডী গ্রামে ১৮৭৭ সালে। তিনি কবিগানের লোকায়ত ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক সমাজ সচেতনতার সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন মাইজভান্ডারী গানের কিংবদন্তি সাধক।
কবিগানের ভাষা ও পরিবেশনা থেকে অশ্লীলতা বিসর্জনে কবি ছিলেন সদা সচেষ্ট। তার রচিত গানের বিষয়ের মধ্যে ছিল সম্পদ-বিজ্ঞান, যুদ্ধ-শান্তি, কৃষক-জমিদার, স্বৈরাচার গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ-সমাজতন্ত্র ইত্যাদি। রমেশ শীল রচিত যেসব গ্রন্থ পাওয়া যায় তার মধ্যে আশেকেমালা, শান্তিডাণ্ডার, মুক্তির দরবার, নূরে দুনিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার রচিত মাইজভান্ডারী গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ
কাজ-৫: মায়ের মুখের মধুর ভাষা বলতে আমি যা বুঝি তা লিখি।
কাজের উদ্দেশ্য: নিজের মতো করে মায়ের ভাষা সম্পর্কে লিখতে পারা।
কাজের ধরন: একক।
নমুনা সমাধান: প্রত্যেক জাতির রয়েছে নিজস্ব ভাষা। মায়ের মুখ থেকে পাওয়া ভাষাই মাতৃভাষা। বাংলাদেশিদের মাতৃভাষা বাংলা, যা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত একটি ভাষা। মানুষ ভাবের আদান-প্রদান করে থাকে তাদের মাতৃভাষায়। মায়ের মুখের ভাষাকে মধুর বলা হয়েছে। কারণ এ শ্রুতিমধুর ভাষায় আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এ ভাষাই আমাদের কাছে সবচেয়ে সহজবোধ্য। শুধু তাই নয়, মনের সব ভাবকে সহজে প্রকাশও করতে পারি।
আরও দেখুন: বিশ্বজোড়া পাঠশালা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: নকশা খুঁজি নকশা বুঝি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ২য় অধ্যায় সমাধান
আশাকরি “শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক–পেইজ–লিংকডিন এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।