৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়: বাংলা মাসের হিসাবে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। অন্য ঋতুর তুলনায় এ ঋতুর স্থায়িত্বকাল সংক্ষিপ্ত। এটি শরতের উজ্জ্বল উষ্ণতায় শুরু হয়ে শীতের হিমশীতলে শেষ হয়ে যায়। মাঝের সময়টুকু পাকা ধানের গন্ধে মন ভরে ওঠে। হেমন্তে গ্রামবাংলার বুকজুড়ে থাকে ধানের খেত। পাকা ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় শীতের আগমনী বাতাস।
পাকা ধানের রং সোনালি। এই সোনালি ধানের খেতে পাখপাখালি ও পশু এসে ভিড় করে। এসব পশু-পাখি যাতে ফসলের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য কৃষকরা তাদের খেতে ‘কাকতাড়ুয়া’ বসায়। পুরোনো কাপড়, বাঁশ, খড়, মাটির পাতিল, চুন প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে মানুষের আদলে কাকতাড়ুয়া তৈরি করা হয়।
কিষান-কিষানি কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। তারা মাটি প্রস্তুত, চারা রোপণ, পানি সেচ দেওয়া, সার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে ফসলের মুখ দেখে। তারপর পাকা ধানে যখন খেত ভরে ওঠে তখন দেখে মনে হয় মাঠে যেন হলুদ রঙের চাদর বিছানো। কৃষকরা এই ধান ঘরে তোলার পর নবান্ন উৎসব করে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষেরা পাহাড়ের গায়ে ‘জুম’ চাষ করে। কৃষকরা আমাদের সবার খাদ্য জোগায়। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা এবং মানবিক হওয়া একান্ত জরুরি।
হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে সমাধান –
কাজ-১: আমরা হেমন্ত প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি । [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-৮১]
আমরা হেমন্ত প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা বন্ধুখাতায় লিখে রাখলাম। হেমন্তের প্রকৃতি ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপলব্ধি করেছি, ধান ক্ষেত ও কিযান-কিষানির ধান কাটা ও মাড়াইয়ের আনন্দ অনুধাবন করেছি। সবুজ চারা ও হলুদ ধান ভালো করে দেখলে রং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। ক্ষেতের মাঝে থাকা কাকতাড়ুয়া তৈরির উপকরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি। হেমন্তের প্রকৃতি কেমন হয় তা খুব ভালো করে জেনেছি এবং সবুজসহ বিভিন্ন রং সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি। হেমন্ত ঋতু সম্পর্কে বন্ধুখাতায় নিম্নোক্তভাবে লিখেছি:
১. কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস মিলে হেমন্ত ঋতু।
২. হেমন্তের শুরুতে শরতের উষ্ণতা এবং শেষে শীতের শীতলতা অনুভূত হয়।
৩. হেমন্ত ঋতুতে কৃষকের ধান পাকে।
৪. বাতাসে ধানের গন্ধ ভেসে বেড়ায়।
৫. কঠোর পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলে কিষান-কিষানিরা।
৬. হেমন্তের শুরুতে ধানের চারা গাছগুলো দেখলে মনে হয় যেন হলুদ চাদর বিছানো।
৭. বাঁশ, পুরোনো কাপড়, খড় ও মাটির পাতিল দিয়ে তৈরি করা কাকতাড়ুয়া ধানক্ষেতে দাঁড় করানো হয়।
৮. ধান মাড়ানোর দৃশ্য এবং মনের সুখে কৃষকের কণ্ঠে আনন্দের গান শোনা যায়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়
কাজ-২: আমরা হেমন্তের প্রকৃতি সম্পর্কে, আমাদের অভিজ্ঞতা বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-৮১]
আমরা হেমন্তের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা বন্ধুখাতায় নিম্নোক্তভাবে লিখে রাখলাম। হেমন্তের প্রকৃতি ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবের আনন্দ নিয়ে আগমন ঘটে হেমন্তের। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস মিলে হেমন্তকাল। প্রকৃতিতে হেমন্তের রূপ হলুদ। শর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠের বুক। মাঠে মাঠে পাকা ধান। কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফসল কাটার কাজে। সোনালি ধানে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে, মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। শুরু হয় নবান্নের উৎসব।
হেমন্ত আসে নীরবে; আবার শীতের কুয়াশার আড়ালে গোপনে হারিয়ে যায়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে হেমন্তের সকালে প্রকৃতি দেখতে বের হয়েছিলাম। সকাল বেলা হালকা বাতাস থাকলেও প্রকৃতি উপভোগ করেছি। সরাসরি ধানক্ষেতে গিয়ে দেখেছি পেকে যাওয়া ধানের মাঠ যেন হলুদ চাদরে ঢাকা। ক্ষেতে ক্ষেতে কৃষক কাকতাড়ুয়া দিয়েছেন যেন পশুপাখি ফসলের ক্ষতি করতে না পারে। এই কাকতাড়ুয়াগুলো একদম মানুষের আদলে বানানো। পুরনো কাপড়, খড়, মাটির পাতিল দিয়ে তৈরি করা তাকতাড়ুয়া আমাদের অভিভূত করেছে। আমরা এসব স্পর্শ করে দেখেছি।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়
কাজ-৩: আমরা হেমন্তের প্রকৃতি দেখে ছবি আঁকার উপাদান হিসেবে হলুদ রং সম্পর্কে জানতে পারি এবং তা বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৮১]
আমরা হেমন্তের প্রকৃতি দেখে ছবি আঁকার উপাদান হিসেবে হলুদ রং সম্পর্কে জেনেছি এবং তা নিম্নোক্তভাবে বন্ধুখাতায় লিখে রেখেছি। দুপুর বেলা আমরা ক’জন ধানক্ষেতে পাকা ধান দেখতে যাই। ভালোভাবে লক্ষ করি, পাকা ধানের রং হলুদ। তখন আমরা হলুদ রং সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করি। প্রকৃতির এত রং, এত রূপ দেখে আমাদের মন ভরে গেল। একেক ঋতুতে প্রকৃতির একেক রকম সাজ সত্যিই খুব আনন্দের। যেন সারা বছর জুড়েই চলে প্রকৃতির উৎসবের আমেজ। আর প্রকৃতির আমেজে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়
টীকা লিখ – হেমন্তের রূপবৈচিত্র্য
কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্তকাল। শরৎ ও শীতের মাঝখানে হেমন্তের বৈচিত্র্য বড়োই রূপময়। নবান্নের ধুমধাম ও আনন্দ- উৎসব নিয়ে ‘হিমের ঘন ঘোমটা’য় আবৃত হয়ে হাজির হয় হেমন্ত। এই সময় ধানের মাঠ সোনালি রূপ ধারণ করে। মনে হয় মাঠের পর মাঠজুড়ে কে যেন মুঠো মুঠো সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। পাকা ধানের গন্ধে চারদিক মৌ মৌ করে। কৃষকের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়। সোনালি ধানে ভরে যায় কৃষকের উঠোন।
পল্লির ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। প্রতিটি ঘরে চিড়া, মুড়ি, পিঠা, পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাংলার নারীরা। নানা পদের পিঠা ও মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। হেমন্ত ছাড়া আর কোনো ঋতুতেই এমন আনন্দ দেখা যায় না। কুয়াশার ভেতর দিয়ে জোছনার ধারা নেমে এসে হেমন্ত প্রকৃতিকে করে তোলে মোহময়। শীতের আমেজে দিনগুলো হয়ে ওঠে কর্মময় আর রাতগুলো কাটে লেপ- কম্বলের ভেতরে আরামে। ঘরে ঘরে ফসলের সওগাত আর আনন্দ- আরাম বিলিয়ে একসময় বিদায় নেয় রূপবৈচিত্র্যে উজ্জ্বল হেমন্তকাল
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়
টীকা লিখ – বাঁশ ও বেত শিল্প
বাংলাদেশে যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে বাঁশ-বেত সেগুলোর অন্যতম। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সাথে জড়িত। এসব তারা তৈরি ও ব্যবহার করে থাকে। লোকজীবনে বাঁশ ও বেতের তৈরি এই শিল্প এ দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে।
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ছাড়াও ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীদের শৌখিন সজ্জাতে এ শিল্পের কদর রয়েছে। বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুড়ি, চুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাই, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখার ব্যাগসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, বাঁশের ঘর, বেড়া, ঝাপ, বেলীক, দরমা, বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতীক।
টকা লিখ – জুম চাষ
“জুম চাষ” বিশেষ শব্দে ঝুম চাষ নামেও পরিচিত। জুম চাষ এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। এই পদ্ধতির চাষে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। জুম চায় পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ হেক্টর ভূমি এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায় এক কথায় উত্তর
প্রশ্ন ১। এদেশে ঋতু পরিবর্তনের ধারায় খুবই সংক্ষিপ্ত ঋতুর নাম কী?
উত্তর: হেমন্তকাল।
প্রশ্ন ২। কোন ঋতুতে ধানে ধান লেগে বাজনা বাজে?
উত্তর: হেমন্ত ঋতুতে।
প্রশ্ন ৩। শীতের আগমনী বাতাস কোথায় ঢেউ খেলে যায়?
উত্তর: পাকা ধানের ওপর।
প্রশ্ন ৪। বাতাসে ভেসে আসা কীসের গন্ধে আমাদের মন ভরে ওঠে?
উত্তর: ধানের গন্ধে।
প্রশ্ন ৫। পশু-পাখি যাতে ফসলের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য কী করে?
উত্তর: কাকতাড়ুয়া বসায়।
প্রশ্ন ৬। কঠোর পরিশ্রম করে সবুজ ধানের চারা বড়ো করে কে?
উত্তর: কিষান-কিষানি।
প্রশ্ন ৭। ধানের চারা গাছগুলো পেকে একসময় কেমন হয়?
উত্তর: হলুদ হয়।
প্রশ্ন ৮। দেখে মনে হয় হলুদ চাদর বিছানো মাঠে’ নির্দেশ করেছে?
উত্তর: পাকা ধানকে।
প্রশ্ন ৯। হেমন্তের সোনালি পাকা ধানের ক্ষেতে কী ভিড় করে?
উত্তর: পাখপাখালি।
প্রশ্ন ১০। কৃষক বাঁশ, পুরনো কাপড়, খড় ও মাটির পাতিল দিয়ে কী বানায়?
উত্তর: কাকতাড়ুয়া।
প্রশ্ন ১১। কাকতাড়ুয়া বানানোর প্রধান উপকরণ কয়টি?
উত্তর: চারটি।
প্রশ্ন ১২। আশ্বিন গেল, কার্তিক মাসে পাকিল খেতের ধান- কার লেখা?
উত্তর: পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের।
আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আরও দেখুন: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়
আরও দেখুন: স্বাধীনতা তুমি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়
আরও দেখুন: নব আনন্দে জাগো সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়
আরও দেখুন: আত্মার আত্মীয় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৬ষ্ঠ অধ্যায়
আরও দেখুন: বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম অধ্যায়
আরও দেখুন: টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৮ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শরৎ আসে মেঘের ভেলায় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৯ম অধ্যায়
আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।