স্বাধীনতা তুমি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়

৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়: বাংলা ভাষার অধিকার, সংস্কৃতি চর্চার অধিকারসহ স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা। এ দেশের মানুষ তা করতে দেয়নি। তারা প্রতিবাদ করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বজ্রকণ্ঠের বাণীতে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের এই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিকে স্বাধীনতা অর্জনে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে।

২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর ডাকে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে কাঁপিয়ে পড়ে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সারা বাংলাদেশকে এগারোটি সেক্টরে ভাগ করা হয়। দীর্ঘ নয় মাস ধরে অনেক সংগ্রাম, অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তের বিনিময়ে বাঙালিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সূর্যসন্তানদের স্মরণে সৈয়দ মাইনুল হোসেনের নকশায় ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

এই স্মৃতিসৌধের সাতটি ত্রিভুজাকৃতি দেওয়াল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৫৪-এর যুক্তফন্ট নির্বাচন, ‘৫৬-এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে নির্দেশ করেছে। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে আমরা বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে যার যেমন ইচ্ছা আঁকতে, লিখতে, পড়তে, বলতে পারি।


  ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়

কাজ-১: আমরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আমাদের আশেপাশের বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলতে পারি এবং তা মোবাইলে ধারণ করে রাখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ২২]

আমরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আমাদের আশেপাশের বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি এবং তা আমরা মোবাইলে ধারণ করে রেখেছি। আমার দল থেকে আমরা নিজেদের মতো করে নিম্নোক্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি।

আমি: আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন আপনি?
মুক্তিযোদ্ধা: ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ভালো আছি। তোমরা কেমন আছ?

আমি: জি। আমরা সবাই ভালো আছি। আমরা আজ আপনার কাছে এসেছি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে। আপনি কি আমাদের এ বিষয়ে জানাবেন?
মুক্তিযোদ্ধা: হ্যাঁ, অবশ্যই।

সুমন: আপনি কত নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন এবং কোন অঞ্চলে। সেই অঞ্চলের বা সেক্টরের কমান্ডার কে ছিলেন?
মুক্তিযোদ্ধা: আমি বর্তমান যে রংপুর জেলা সেখানে যুদ্ধ করেছিলাম ৬ নম্বর সেক্টরে। সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাসারের নেতৃত্বে।

রিফাত: পুরো দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে কেন ভাগ করা হয়েছিল?
মুক্তিযোদ্ধা: মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে পুরো দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়।

তুলি: আপনার যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করবেন?
মুক্তিযোদ্ধ: হুম। তখন চারপাশের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। আমি এবং আমার সহযোদ্ধারা মিলে আমাদের সেই অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করার প্রচেষ্টায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আশপাশের বাজার দোকান-পাট মানুষের ঘর বাড়িতে শত্রুরা আগুন দিয়েছিল এবং নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করেছিল।

তুলি: তখন সেখানকার লোকজনের কী অবস্থা হয়েছিল?
মুক্তিযোদ্ধা: লোকজন ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, সাহসীরা শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

সবাই: আপনার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কথা শুনে আমরা উপকৃত হলাম। আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। ভালো থাকবেন।
মুক্তিযোদ্ধা: তোমরাও ভালো থেকো।

কাজ-২ : আমরা বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, পত্রিকা সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার চেষ্টা করতে পারি এবং বইগুলোর নাম বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-২২]

আমরা বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, পত্রিকা সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছি এবং বইগুলোর নাম বন্ধুখাতায় নিম্নোক্তভাবে লিখে রেখেছি।

১. মুক্তিযুদ্ধের গল্প- হাসান আজিজুল হক।
২. আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ- হানিফ তালুকদার।
৩. ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস – মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
৪. একাত্তরের গল্প- সেলিনা হোসেন।
৫. মা- আনিসুল হক।
৬. মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র – সেলিনা হোসেন।
৭. সেরা সাত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস – হুমায়ূন আহমেদ।
৮. মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ উপন্যাস প্রথম খণ্ড – সেলিনা হোসেন।
৯. পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় – সৈয়দ শামসুল হক।


    স্বাধীনতা তুমি সমাধান

কাজ-৩: আমরা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি । [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা-২২]

মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে নিম্নোক্তভাবে বন্ধুখাতায় লিখে রেখেছি।
১. পুরো বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
২. ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
৩. বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৪. মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে পুরো দেশকে সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।
৫. পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম হত্যাকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছিল।
৬. ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা হয়।

৭. দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বাঙালিরা বিজয় অর্জন করে।
৮. মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম আর ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করেছি। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করেছি।


৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায় এক কথায় উত্তর

প্রশ্ন ১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণ কোথায় দিয়েছিলেন?
উত্তর: তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে।

প্রশ্ন ২। ১৯৭১ সালের মার্চের কত তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?
উত্তর: ২৫শে মার্চ।

প্রশ্ন ৩। স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী সূর্যসন্তানদের স্মরণে কী তৈরি করা হয়েছে?
উত্তর: স্মৃতিসৌধ।

প্রশ্ন ৪। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে কী সংঘটিত হয়?
উত্তর: মানব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা।

প্রশ্ন ৫। মুক্তিযুদ্ধ কয় মাস ব্যাপী হয়েছিল?
উত্তর: নয় মাস।

প্রশ্ন ৬। মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহিদ হন?
উত্তর: ত্রিশ লাখ।

প্রশ্ন ৭। কাদের স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর: স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহিদদের।

প্রশ্ন ৮। জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে?
উত্তর: সৈয়দ মাইনুল হোসেন।

প্রশ্ন ৯। জাতীয় স্মৃতিসৌধের দেয়াল কয়টি?
উত্তর: ৭টি।

প্রশ্ন ১০। স্মৃতিসৌধের দেয়ালগুলোর আকৃতি কেমন?
উত্তর: ত্রিভুজ আকৃতির।

প্রশ্ন ১১। ভাষা আন্দোলন কত সালে সংঘটিত হয়?
উত্তর: ১৯৫২ সালে।

প্রশ্ন ১২। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়েছিল কত সালে?
উত্তর: ১৯৫৪ সালে।

প্রশ্ন ১৩। শাসনতন্ত্র আন্দোলন হয় কত সালে?
উত্তর: শাসনতন্ত্র আন্দোলন হয় ১৯৫৬ সালে।

প্রশ্ন ১৪। শিক্ষা আন্দোলন হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৬২ সালে।

প্রশ্ন ১৫। ৬ দফা আন্দোলন হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৬৬ সালে।

প্রশ্ন ১৬। গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল কত সালে?
উত্তর: ১৯৬৯ সালে।

প্রশ্ন ১৭। আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস কবে?
উত্তর: ২৬ মার্চ।

প্রশ্ন ১৮। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?
উত্তর: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আরও দেখুন: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়


আশাকরি “স্বাধীনতা তুমি সমাধান ” আর্টিকেল টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে আমরা লাইভ ক্লাস ও নান সাজেশন শেয়ার করি। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top