সমাস এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন শব্দের গঠন হয়। সমা-সের অর্থ সংক্ষেপণ; একাধিক পদকে একপদীকরণ।সংজ্ঞা: পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদ একপদে রূপান্তরিত হলে তাকে সমাস বলে।
যেমন- কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার=কপোতাক্ষ।
অহি ও নকুল=অহিনকুল।
সমস্তপদ: এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া নতুন পদকে সমস্তপদ বলে।
ব্যাসবাক্য/স-মাসবাক্য: যে-সব পদ দিয়ে সমস্তপদকে ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে ব্যাসবাক্য বলে।
যেমন- অহি ও নকুল এটি ব্যাসবাক্য।
সমস্যমানপদ: যে-সব পদ নিয়ে
স-মাস সংগঠিত হয় তাকে সমস্যমানপদ বলে।
পূর্বপদ ও পরপদ: সমাসবদ্ধপদের প্রথম অংশ পূর্বপদ এবং শেষ অংশের নাম পরপদ/উত্তরপদ বলে।
‘অহি’ পূৃর্বপদ এবং ‘নকুল’ পরপদ।
সমাস সমাসের সহজ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ বিভাজন: অনেক পণ্ডতের মতে ৪প্রকার আবার অনেকের মতে ৬প্রকার।
আমরা ৪প্রকার নিয়ে আলোচনা করব।
১. দ্বন্দ্ব ।
২. কর্মধারয় ।
৩.তৎপুরুষ ।
৪. বহুব্রীহি ।
দ্বন্দ্ব
সংজ্ঞা: যেখানে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থপ্রাধান্য থাকে এবং সমস্তপদে সংযোজকটি লোপ পেয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে দ্বন্দ্ব বলে।
যেমন- মা ও বাবা= মা-বাবা।
শ্রেণিবিভাগ:
দ্বন্দ্বকে অনেকভাগে ভাগ করা যায়। আমরা কয়েকপ্রকার দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করব।
১. মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্বে দুটিপদের সম্পর্ক বোঝায় তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব বলে।
মা ও বাবা= মা-বাবা।
ভাই ও বোন= ভাইবোন।
মাছ ও ভাত= মাছ-ভাত।
সোনা ও রূপা= সোনারূপা।
২. সমার্থক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্বে দুটি পদই একই অর্থ বহন করে তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব বলে।
কাজ ও কর্ম= কাজ-কর্ম।
হাট ও বাজার= হাট-বাজার।
নদ ও নদী= নদনদী।
৩. বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্বের উভয়পদে বিপরীত অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব বলে।
ছেলে ও মেয়ে= ছেলে-মেয়ে।
ধনী ও গরিব = ধনী-গরিব।
জোয়ার ও ভাটা= জোয়ারভাটা।
৪. বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্বে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব প্রকাশ পায় তাকে বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব বলে।
স্বর্গ ও নরক= স্বর্গ-নরক।
অহি ও নকুল= অহি-নকুল।
দা ও কুৃমড়ো= দা-কুমড়ো।
৫. অলুক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্বে পূর্বপদ ও পরপদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে।
দেশে ও বিদেশে= দেশে-বিদেশে।
হাতে ও কলমে= হাতে-কলমে।
ঘরে ও বাইরে= ঘরে-বাইরে।
★এখানে ৭মী বিভক্তি(এ-বিভক্তি) লোপ পায়নি।
কর্মধারয়
সংজ্ঞা: যেখানে পরপদের অর্থের প্রাধান্য প্রকাশ পায় তাকে কর্মধারয় বলে।
সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন।
এখানে পরপদের প্রাধান্য প্রতীয়মান হওয়ায় এটি কর্মধারয় ।
কর্মধারয়ের শ্রেণিবিভাগ:
১. সাধারণ কর্মধারয়।
২. মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।
৩. উপমামূলক কর্মধারয়।
★আবার উপমামূলক কর্মধারয়কে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
ক. উপমান।
খ. উপমিত।
গ. রূপক।
সাধারণ কর্মধারয়: পূর্বপদ বিশেষণ, পরপদ বিশেষণ; পূর্বপদ বিশেষ্য, পরপদ বিশেষ্য; পূর্বপদ বিশেষ্য, পরপদ বিশেষণ অথবা পূর্বপদ বিশেষণ পরপদ বিশেষ্য হয়ে যা, হয় তাকে সাধারণ কর্মধারয় বলে।
নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম।
মহান যে বীর= মহাবীর।
যিনি ভদ্র তিনি অর্জুন= ভদ্রার্জুন।
যিনি চালাক তিনি চতুর= চালাকচতুর।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয়-এ ব্যাসবাক্যের অন্তর্গত সমস্যমানপদের এক বা একাধিক পদ লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় বলে।
বিজয় নির্দেশক পতাকা= বিজয়পতাকা।
ঘরে আশ্রিত জামাই= ঘরজামাই।
সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন।
পল মিশ্রিত অন্ন= পলান্ন।
দুধ মিশ্রিত চা= দুধচা।
উপমান কর্মধারয়: বই-পুস্তকে অনেক সংজ্ঞা আছে, যা বোঝা তুলনামূলকভাবে দুরূহ । সহজভাবে বলতে গেলে যে উপমা সত্য হবে সেটি উপমান কর্মধারয় ।
অরুণের ন্যায় রাঙা= অরুণরাঙা।
শশের ন্যায় ব্যস্ত= শশব্যস্ত।
তুষারের মতো শুভ্র= তুষারশুভ্র।
কুসুমের ন্যায় কোমল= কুসুমকোমল।
উপমিত কর্মধারয়: সহজভাবে বলতে গেলে, যে উপমা মিথ্যা হবে সেটি উপমিত কর্মধারয় ।
মুখ চন্দ্রের ন্যায়= চন্দ্রমুখ।
নর সিংহের ন্যায়= নরসিংহ।
কুমারি ফুলের ন্যায়= ফুলকুমারি।
রূপক কর্মধারয়: সহজভাবে পূর্বপদে abstract noun এবং পরপদে noun হয়ে রূপক কর্মধারয় গঠিত হয়। আরেকটু সহজভাবে বলতে গেলে, প্রথমপদ দেখা যাবে না, পরপদ দেখা যাবে।
মন রূপ মাঝি= মনমাঝি।
শোক রূপ অনল= শোকানল।
বিষাদরূপ সিন্ধু= বিষাদসিন্ধু।
প্রাণ রূপ পাখি= প্রাণপাখি।
সমাস
তৎপুরুষ
সংজ্ঞা: পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে তৎপুরুষ সংঘটিত হয়।
বিভক্তি:
২য়া: কে, রে।
৩য়া: দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক।
৪র্থী: কে, রে, জন্য, নিমিত্ত।
৫মী: হতে, থেকে, চেয়ে।
৬ষ্ঠী: র, এর।
৭মী: এ, য়, তে।
কয়েকপ্রকার তৎপুরুষ নিয়ে আলোচনা করব।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ: দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে ২য়া তৎপুরুষ সংঘটিত হয়।
ধর্মকে সংক্রান্ত= ধর্মসংক্রান্ত।
বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন।
পদকে আশ্রিত= পদাশ্রিত।
চরণকে আশ্রিত= চরণাশ্রিত।
তৃতীয়া তৎপুরুষ: তৃতীয়া বিভক্তি লোপে তৃতীয়া তৎপুরুষ হয়।
জরা দ্বারা জীর্ণ= জরাজীর্ণ।
শ্রম দ্বারা লব্ধ= শ্রমলব্ধ।
ঘি দিয়ে ভাজা= ঘিয়েভাজা।
মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা।
চতুর্থী তৎপুরুষ : ৪র্থী বিভক্তি লোপে ৪র্থী তৎপুরুষ হয়।
হজের জন্য যাত্রা= হজযাত্রা।
রান্নার নিমিত্তে ঘর= রান্নাঘর।
গুরুকে ভক্তি= গুরুভক্তি।
শিশুর জন্য সাহিত্য= শিশুসাহিত্য।
পঞ্চমী তৎপুরুষ: ৫মী বিভক্তি লোপে ৫মী তৎপুরুষ সংঘটিত হয়।
ঋণ থেকে মুক্তি= ঋণমুক্তি।
প্রাণের চেয়ে প্রিয়= প্রাণপ্রিয়।
বিলেত হতে ফেরত= বিলেতফেরত।
ষষ্ঠী তৎপুরুষ: ৬ষ্ঠী বিভক্তি লোপে তাকে ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ হয়।
কবিদের গুরু= কবিগুরু।
সূর্যের আলোক= সূর্যালোক।
চায়ের বাগান= চাবাগান।
ফুলের গাছ= ফুলগাছ।
সপ্তমী তৎপুরুষ: ৭মী বিভক্তি লোপে ৭মী তৎপুরুষ হয়।
অকালে মৃত্যু= অকালমৃত্যু।
অকালে পক্ব= অকালপক্ব।
বাক্সে বন্দি= বাক্সবন্দি।
বস্তায় পচা= বস্তাপচা।
অলুক তৎপুরুষ: যে তৎপুরুষে বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক তৎপুরুষ বলে।
ঘোড়ার ডিম= ঘোড়ারডিম।
মামার বাড়ি = মামারবাড়ি।
বহুব্রীহি সমাস সংজ্ঞা: যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়পদের অর্থের প্রাধান্য না বুঝিয়ে নতুন কোনো অর্থ বোঝায় তাকে বহুব্রীহি বলে।
দশ আনন যার= দশানন।
এখানে, দশ ও বোঝাচ্ছে না; মাথাও বোঝাচ্ছে না। এখানে দশানন দ্বারা রাবণকে বোঝাচ্ছে।
৬প্রকার বহুব্রীহি নিয়ে আলোচনা করব।
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি: পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়ে যা হয় তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে।
নীল অম্বর যার= নীলাম্বর।
নীল কণ্ঠ যার= নীলকন্ঠ।
পোড়া কপাল যার= পোড়াকপাল।
ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: উভয় পদ বিশেষ্য হলে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি হয়।
নদী মাতা যার= নদীমাতৃক।
আশীতে বিষ যার= আশীবিষ।
ব্যতিহার বহুব্রীহি: পারস্পরিক সাপেক্ষ ক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো অবস্থার পুনরুক্তি ঘটলে তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি বলে।
কানে কানে যে কথা= কানাকানি।
পদলোপী বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহিতে সমাস্যমানপদের এক বা একাধিক পদ লোপ পায় তাকে পদলোপী বহুব্রীহি বলে।
কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার= কপোতাক্ষ।
বিম্বের ন্যায় রক্তিম অধর যার= বিম্বধরা।
অলুক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহিতে সমস্যমানপদের অন্তর্গত পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।
গলায় গামছা যার= গলায় গামছা।
গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= গায়েহলুদ।
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি।(
আরও দেখুন )
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহিতে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক হয় তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে।
দশ আনন যার= দশানন।
চার পা যার= চৌপায়া।
তিন পা যার= তেপায়া।
আশাকরি আর্টিকেলটি তোমাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজ ।
আরও দেখুন: মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা
আরও দেখুন:সেইদিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা
আরও দেখুন:কপোতাক্ষনদ কবিতার ব্যাখ্যা
আরও দেখুন:Present tense
আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আরও দেখুন: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়
আরও দেখুন: স্বাধীনতা তুমি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়
আরও দেখুন: নব আনন্দে জাগো সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়
আরও দেখুন: আত্মার আত্মীয় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৬ষ্ঠ অধ্যায়
আরও দেখুন: বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম অধ্যায়
আরও দেখুন: টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৮ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শরৎ আসে মেঘের ভেলায় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৯ম অধ্যায়
আরও দেখুন: হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়
আরও দেখুন: বিশ্বজোড়া পাঠশালা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: নকশা খুঁজি নকশা বুঝি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ২য় অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: মায়ের মুখের মধুর ভাষা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: স্বাধীনতা আমার – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৪র্থ অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: বৈচিত্র্যে ভরা বৈশাখ – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৫ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: কাজের মাঝে শিল্প খুঁজি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: প্রাণ প্রকৃতি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৭ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: প্রাণের গান – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৮ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: চিত্রলেখা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৯ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: শরৎ উৎসব – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১০ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: সোনা রোদের হাসি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১১ অধ্যায় সমাধান ।