মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা[SSC]

 মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা:

       মানুষ
         – কাজী নজরুল ইসলাম
কবি পরিচিতি: বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী ও সামতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৮৯৯সালের ২৪শে মে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিম বঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। বিজলী পত্রিকায় বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হলে কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি: অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, সাম্যবাদী, সর্বহারা,  সিন্ধুহিন্দোল, সন্ধ্যা, চক্রবাক, প্রলয়শিখা,কুহেলিকা। ১৯৭২সালে নজরুলকে ঢাকায় এনে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। ১৯৭৬সালের ২৯শে আগস্ট কবি নজরুল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা
মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা:

                                 গাহি সাম্যের গান —–
 মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই ,নহে কিছু মহীয়ান্!
 নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
 সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।—
ব্যাখ্যা: অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের চেয়ে মহান আর কিছু নেই। ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভেদ তিনি পছন্দ করেন না। তার মতে,’সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই।’
            ‘পূজারী, দুয়ার খোল,
 ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
 স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
  দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয়!-
  জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
  ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনি  ক’ সাত দিন!’
  সহসা বন্ধ হল মন্দির, ভুখারি ফিরিয়া চলে,
  তিমিররাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!
          ভুখারি ফুকারি কয়,
  ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’(আরও দেখুন)
ব্যাখ্যা:পুজারি স্বপ্নে দেখেছেন, ক্ষুধার ঠাকুর দরজায় দাড়িয়ে আছেন। তিনি ভেবেছেন হয়তো দেবতার আশীর্বাদে রাজা-টাজা হয়ে যাবেন। দরজায় গিয়ে দেখতে পায় ক্ষুধার্ত ব্যক্তি দাড়িয়ে আছে। ক্ষুধার্ত পথিক ডেকে বললেন,’আমি সাতদিন ধরে অনাহারে; আমাকে কিছু খেতে দিন।’ তৎক্ষণাৎ পুরোহিত মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। পথিক অন্ধকার রজনীতে ফিরে চলে গেছে।  এবং চিৎকার করে বলে,’দেবতার মন্দির নয়; এই মন্দির পূজারির।
 মসজিদে কাল শির্-নি আছিল, অঢেল গোস্ত-রুটি
 বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
 এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন,
  বলে ‘বাবা, আমি ভুকা-ফাঁকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
 তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
 ভুখা আছো মরো গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
  ভুখারী কহিল, “না বাবা!” মোল্লা হাঁকিল – ‘তা হলে শালা,
 সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ব্যাখ্যা:মসজিদে গতকাল শিরনি আছিল;—অঢেল গোসত রুটি বেঁচে গেছে; তাই মোল্লা সাহেব কুটি কুটি হাসছেন। এমন সময় একজন রুগ্‌ণ মুসাফির এসে মোল্লা সাহেবকে বললেন,’আমি সাতদিন ধরে উপোষ।’ ক্ষণিক পরে মোল্লা সাহেব ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে দিয়েছেন এবং গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরতে বলেছেন।  তিনি আরও বলেছেন,’তুই বেটা নামাজ পড়িস’। প্রত্যুত্তরে ক্ষুধার্ত পথিকটি বলেছেন, না, আমি নামাজ পড়ি না।  কাল বিলম্ব না করে মোল্লা সাহেব মসজিদে তালা লাগিয়ে দিলেন। নজরুল মূলত বোঝাতে চেয়েছেন; মানব ও মানবতাকে পশ্চাতে রেখে ধর্ম হয় না।
   ভুখারি ফিরিয়া চলে,
   চলিতে চলিতে বলে—–
 “আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
 আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করনি প্রভু!
 তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
 মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!”
ব্যাখ্যা: উপায় না পেয়ে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি ফিরে চলে যায়—যেতে যেতে তিনি ভাবে ৮০বছর স্রষ্টাকে তিনি ডাকেনি; তারপরেও তিনি একমুহূর্তের জন্যও ওই মুসাফিরকে অনাহারে রাখেননি। এই চরণগুলোর মাধ্যমে কবি নজরুল স্বার্থান্বেষী বকধার্মিকদের চরিত্র তুলে ধরেছেন। তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে করে ফেলেছেন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। তারা মনুষ্যত্বের চেয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সদা তৎপর। তারা প্রভুর মসজিদ/মন্দিরে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
 কোথা চেঙ্গিস, গজনি-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
 ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
 খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
 সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি-শাবল চালা!
ব্যাখ্যা: ধর্মকে কেন্দ্র করে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে দীপ্ত কণ্ঠে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।  তিনি আহ্বান করেন গজনীর সুলতান মাহমুদ; যাযাবর চেঙ্গিস খান এবারের দেবালয় ধ্বংসকারী কালা পাহাড়কে—ভজনালয়ের তালা দেওয়া দরজা ভেঙে ফেলার জন্য।
         হায় রে ভজনালয়,
 তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়!
ব্যাখ্যা: কবির দৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার না দিয়ে গালমন্দ করে যারা তাড়িয়ে দেয়, তারা ভণ্ড। অথচ, এরকম স্বার্থান্বেষী অনেক ভণ্ড ভজনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

মানুষ কবিতার শব্দার্থ:
শাবল–লোহা দ্বারা নির্মিত অস্ত্র।(আরও দেখুন)
দ্বার–দরজা, দোর।
ভজনালয়–উপাসনালয়।
পুরুত–পুরোহিত।
অন্ন–খাবার, আহার্যদ্রব্য।
ভুখারি–ক্ষুধার্ত মানুষ।
গো-ভাগাড়–মরা গোরু ফেলার জায়গা।
ভুখা–ক্ষুধার্ত।
লেঠা–ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট।
আজারি–রুগ্‌ণ।
মুসাফির–পান্থ, পথিক, ভ্রমণকারী।
তিমিররাত্রি–অন্ধকার রাত।
সহসা–হঠাৎ।
পান্থ–পথিক।
গাত্র–গা, শরীর, দেহ।
জ্ঞাতি–আত্মীয়, কুটুম।
মহীয়ান–মহান।
সাম্য—সাদৃশ্য, সমতা।

আরও দেখুন:সমাসের সহজ ব্যাখ্যা

আরও দেখুন:সেইদিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা

আরও দেখুন:কপোতাক্ষনদ কবিতার ব্যাখ্যা

আরও দেখুন: আনন্দধারা প্রশ্নোত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শীত-প্রকৃতির রূপ সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ২য় অধ্যায়
আরও দেখুন: পলাশের রঙে রঙিন ভাষা সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৩য় অধ্যায়
আরও দেখুন: স্বাধীনতা তুমি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৪র্থ অধ্যায়
আরও দেখুন: নব আনন্দে জাগো সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৫ম অধ্যায়

আরও দেখুন: আত্মার আত্মীয় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৬ষ্ঠ অধ্যায়
আরও দেখুন: বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম অধ্যায়
আরও দেখুন: টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৮ম অধ্যায়
আরও দেখুন: শরৎ আসে মেঘের ভেলায় সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ৯ম অধ্যায়
আরও দেখুন: হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে সমাধান – ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি ১০ম অধ্যায়

আরও দেখুন: বিশ্বজোড়া পাঠশালা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: নকশা খুঁজি নকশা বুঝি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ২য় অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: মায়ের মুখের মধুর ভাষা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: স্বাধীনতা আমার – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৪র্থ অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: বৈচিত্র্যে ভরা বৈশাখ – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৫ম অধ্যায় সমাধান

আরও দেখুন: কাজের মাঝে শিল্প খুঁজি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: প্রাণ প্রকৃতি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৭ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: প্রাণের গান – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৮ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: চিত্রলেখা – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ৯ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: শরৎ উৎসব – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১০ম অধ্যায় সমাধান
আরও দেখুন: সোনা রোদের হাসি – শিল্প ও সংস্কৃতি ৭ম শ্রেণি ১১ অধ্যায় সমাধান


 

আশাকরি “মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা[SSC] আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোনো আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুকপেইজলিংকডিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top